হাসান শাহরিয়ার শাওন
আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ইইই বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ডিআইইউ শিক্ষার্থী ই-মেইল থেকে একটি বার্তা পাই। সেখানে বলা হয়, স্কিল জবসের আয়োজনে অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম সিজন-৪ শুরু হতে যাচ্ছে। সঙ্গে একটি রেজিস্ট্রেশন লিংকও রয়েছে। সম্পূর্ণ ইমেইল পড়ে লিংকে প্রবেশ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করি।
সেই অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম সিজন-৪ এ চার শতাধিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলাম। সেই ৪০০ জন প্রার্থী থেকে প্রাথমিকভাবে ২৭০ জন প্রার্থীকে বাছাই করা হয়। অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম সিজন ৪ এর জন্য ২৭০ জন প্রার্থীর ভেতরে আমিও নির্বাচিত হই।
২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম সিজন-৪ এর তিন দিনের গ্রুমিং সেশন শুরু হয়। প্রথন দিনের সেশনের আলোচ্য বিষয় ছিল:
আবেগীয় দক্ষতা বৃদ্ধি
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি
নেতৃত্ব গুণের বিকাশ
প্রথম দিনের সেশনে আমাদের সামনে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন। তিনি আমাদেরকে কর্পোরেট আচরণ ও শারীরিক ভাষা সম্পর্কে ধারনা দেন। এই সেশনের দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন সফট স্কিল বিশেষজ্ঞ ও কর্পোরেট কোচ যীশু তরফদার। তাঁর সেশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কীভাবে আবেগীয় দক্ষতা ব্যবহার করে গ্রাহর্কের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হয় এবং গ্রাহকের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হয়। পরবর্তী সেশন ছিল নেসলে বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটি ম্যানেজার একেএম হাবিবুল হক। তিনিও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও যোগাযোগ সম্পর্কে ধারনা দেন। প্রথম দিনের এই সেশনের শেষ বক্তা ছিলেন ইগলু আইসক্রিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিএম কামরুল হাসান। তিনি সেলসশ্যানশিপ সম্পর্কে বিভিন্ন দরকারি তথ্য উপস্থাপন করেন আমাদের সামনে।
দ্বিতীয় দিনের সেশনে আমাদের সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। তিনি বক্তব্য দেন নেতৃত্ব বিকাশের ওপর। ড. মো. সবুর খান বলেন, কোনো পরিস্থিতিতেই হাল ছাড়া যাবে না। তুমি যদি একজন ভালো সেলসম্যান হতে পারো, তুমি অবশ্যই একজন ভালো মানুষ হতে পারবে। এ সময় তিনি তাঁর নিজের বিক্রয় ও বিপণন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন আমাদের সঙ্গে।
ড. মো. সবুর খানের পর সেশন পরিচালনা করেন প্রখ্যাত বিপণন বিশেষজ্ঞ রাজীব আহমেদ। তিনি তাঁর সেশনে নিয়মানুবর্তিতার উপর জোর দেন। তিনি আমোদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেন যে একজন সেলসম্যানের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা।
তাঁর মতে যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন একজন সেলসম্যানের সেগুলো হলো:
স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা
দ্রুত হাঁটা
বেশি পানি পান করা
প্রতিনিয়ত হাসা
মেডিটেশন
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটি ছিল বিপণন বিশেষজ্ঞ তাজদিন হাসানের। তিনি বিটুবি এবং বিপণন সম্পর্কে কথা বলেন। তাজদিন হাসান বলেন, বিক্রয়কর্মীদের ইগো থাকা চলবে না। সেশনের শেষ পর্যায়ে তিনি আমাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর সেশন পরিচালনা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (দীপ্তি) নির্বাহী পরিচালক রথীন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি ব্যবহারিক জ্ঞান, সফট স্কিল এবং নৈতিকতা নিয়ে কথা বলেন। এদিন শেষ বক্তা ছিলেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। তিনি নেতৃত্ব উন্নয়ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বক্তব্যের শুরুতেই জন কোয়েন্সি অ্যাডামসের একটি উক্তি উল্লেখ করে বলেন, ‘তোমার কাজকর্ম যদি অন্যকে অনুপ্রাণিত করে, অন্যকে স্বপ্ন দেখায়, অনেক বেশি শিখতে আগ্রহী করে তোলে, তবে তুমি একজন নেতা।’ এরপর তিনি দলগতভাবে কাজ করা, নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা, ছোট-বড় সব ধরনের অর্জনকে উদযাপন করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশদ আলোচনা করেন।
সমাপনী দিনের সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কেএম হাসান রিপন।
তিন দিনের এই গ্রুমিং সেশন শেষে নানা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২৭০জন থেকে ৩০জন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়। স্কিলজবস এই পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরপর নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে ড্যাফোডিল ফ্যামিলির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক মাসের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। সেই নির্বাচিত ৩০জনের মধ্যে স্থান করে নিতে সক্ষম হই আমিও।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর শুরু হয় আমাদের অন দ্য জব ট্রেনিং। প্রশিক্ষণ চলাকালীন আমরা যেসব কাজ করেছিলাম সেগুলো হচ্ছে:
কোম্পানি ভিজিট
টেলি কাউসেলিং
ব্লগ লেখা
তথ্য অনুপ্রবেশ
দলবদ্ধভাবে সম্পাদিত কর্ম
অন দা জব ট্রেনিংয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদেরকে নিয়ে কে. এম হসান রিপন স্যার এবং Skill.jobs মিটিং করতেন এবং আমদের একটি সাপ্তাহিক প্রতিবেদন জমা দিতে হতো যেখানে উল্লেখ করতে হতো সাপ্তাহিক কাজের কথা।
এই মিটিংয়ের আলোচ্য বিষয় ছিল:
কে কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে
কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়
অর্জন সম্পর্কে
টার্গেট সম্পর্কে
দীর্ঘ ১ মাসের প্রশিক্ষণ এবং চারটি মিটিংয়ের মাধ্যমে আমাদের অন দা জব ট্রেনিংয়ের সমাপ্তি ঘটে। Skill.jobs প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি প্রার্থীর পৃথক পৃথক রিপোর্ট নেয়।
পরবর্তীতে গত বছরের ২৭ নভেম্বর তারিখে আমাদের চূড়ান্ত অধিবেশন এবং উপস্থাপনা অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয় এবং এই সেশনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, বিএসডিআইএইর নির্বাহী পরিচালক কেএম হাসান রিপন এবং স্কিলজবসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সবশেষে ১০ জন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। আর এর মধ্যে নির্বাচিত হই আমিও।
এরপর ৪ নভেম্বর নিয়োগপত্র এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়। আমাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। এসময় ড্যাফোডিল ফ্যামিলির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এই নিয়োগপত্র হাতে পাবার পর থেকেই শুরু হয়ে গেলো সেলস এন্ড মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া, আমি নিজের মধ্যে উপলব্ধি করলাম আমার ভালোলাগা হচ্ছে মানুষের সাথে মেশা, নতুন নতুন মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলা যা আমাকে এই মার্কেটিং সেক্টর দিবে। শুরু হয়ে গেলো কাজের প্রতি ভালোলাগা। এর পড়ে এডুকেশন সেক্টর থেকে পরিবর্তন করে ক্যারিয়ার শুরু করলাম কনক্রিট ইকুইপমেন্ট সেক্টরে, শিক্ষাগত ভাবে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হওয়াতে টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করতে আরও ভালোলাগা শুরু হয়ে গেলো। এর পড়ে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ......